গাভীর দুধ উৎপাদন বাড়ানোর উপায় সাথে কিছু টিপস – GorurHaat | First Online Gorurhaat In Bangladesh

গাভীর দুধ উৎপাদন বাড়ানোর উপায় সাথে কিছু টিপস

গাভীর দুধ উৎপাদন বাড়ানোর উপায়

গাভীর দুধ উৎপাদন বাড়ানোর উপায় কিছু টিপস

প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা আলোচনা করব গাভীর দুধ উৎপাদন বাড়ানোর উপায়? এটা উন্নতজাতের গাভী ছাড়াও অন্যান্য জাতের গাভীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

খুব কাছাকাছি থেকে নানাভাবে উপকৃত করে এমন প্রাণীর মধ্যে গরু অন্যতম।  মহান আল্লাহর একটি সৃষ্টি যা মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। এর গোশত ও দুধ মানবদেহের সব প্রয়োজন পূরণ করে। দুধ হলো আদর্শ খাদ্য। যা খাদ্যের প্রায় সব উপাদান বহন করে। সুস্থ সবল গাভী হতে পরিমিত দুধ পাওয়া যায়। আমাদের দেশের গাভীগুলোর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। এর পেছনে কিছু পরিবেশগত কারণ ও জাতগত কারণ রয়েছে। একেক জাতের গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা একেক রকম।
আমাদেশে দেশে জাত ছাড়াও বিষয় আছে যা দুধ উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক। আগে জেনে নেয়া যাক, যে বিষয়গুলোর ওপর দুধ উৎপাদন নির্ভরশীল-

১. গাভীর আকার : গাভীর আকার এর ওপর উৎপাদন অনেকটা নির্ভর করে। সাধারণত বড় আকারের গাভী যেমন  উন্নতজাতের গাভী হতে বেশি দুধ পাওয়া যায়।
২. বাছুর প্রসবের সময় : বাছুর প্রসবের সময়ের ওপর দুধ উৎপাদন নির্ভর করে। শরৎকালে গাভীর বাচ্চা প্রসবে বসন্ত ঋতুতে প্রসব অপেক্ষা প্রায় ১০% অধিক দুধ উৎপাদিত হয়, এর কিছু আবহাওয়াগত কারণ রয়েছে।আর  উন্নতজাতের গাভী ১৫% পর্যন্ত বেশি দুধ দিতে পারে।
৩. পুষ্টি : গাভীর পুষ্টির উপর অনেকাংশে দুধ উৎপাদন নির্ভর করে। দুধ নিঃসরণকারী কোষে দুধ সৃষ্টি করতে পারে যদি পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় আর গাভীর পুষ্টির উৎস দুইটি তার নিজের দেহ এবং যে খাদ্য সে খায়।
৪. বয়স : গাভীর বয়সের সাথে সম্পর্কিত দুধ উৎপাদন ক্ষমতা সাধারণত গাভী তার ৩ থেকে ৬ (বাছুর সংখ্যা) দুধকাল সর্বোচ্চ পরিমাণ দুধ দেয়।
৫. স্বাস্থ্য : গাভীর স্বাস্থ্য ভালো থাকলে অর্থাৎ  উন্নতজাতের গাভী দুধ উৎপাদন অনেকটা ভালো থাকে।
৬. আদর্শ ব্যবস্থাপনা : দুধ দোহনের উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও বাসগৃহ এবং সামগ্রীর পরিচালনায় দুধ উৎপাদন প্রভাব রয়েছে।

ফ্যাট                   ৩৫-৪৫%
প্রোটিন                 ৩.৫ – ৫%] ল্যাকটোস              ৪-৫%
অ্যাস (মিনারেল)     ৭০ – ৮০%।
টোটাল সলিড         ১৩-১৪%
পানি                    ৮৭ .৫%
কোসিন                ২.৬%
অ্যালবুমিন গ্লোবুলিন   ০.৫%
যে বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি রাখলে উৎপাদন বাড়বে-
১. ড্রাই পিরিয়ড বৃদ্ধি : ড্রাই পিরিয়ড বলতে সেই সময়কে বোঝায় যখন গাভীর বাছুর বড় হওয়ার পর থেকে পুনরায় গর্ভবর্তী হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়কে। এ সময় সাধারণত ৫০-৬০ দিন হলে ভালো হয়। এ সময়ে গাভীর তার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে এবং পরবর্তী বাছুরের জন্য নিজের দেহকে সুষ্ঠুভাবে তৈরি করতে পারবে। আজ এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ড্রাই পিরিয়ড বৃদ্ধি পেলে দুধ উৎপাদন বাড়ে।
২. সুষম খাদ্যের সরবরাহ : গর্ভবতী গাভীর জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্য সরবরাহ। এ সময় প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি প্রয়োজন। যা গাভীর নিজের জন্য ও বাছুরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গাভীর পুষ্টির উপর নির্ভর করে গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা ও বাচ্চার দেহ গঠন। তাই গর্ভবতী গাভীকে বিশেষভাবে সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
৩. পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ : দেহের পরিপাক তন্ত্র সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সুষম পানি  প্রয়োজন। পানি দেহের পরিমিত পানি দেহের মেটাবলিজম সঠিক রাখে।
৪. বাছুর প্রসব কালের গাভীর পরিচর্যা নিশ্চিত করা : গাভীর বাছুর প্রসবকালে নিতে হবে বাড়তি পরিচর্যা। এ সময় গাভীকে নরম বিছানার (খড় বিছিয়ে) ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত বকনা গরুর ক্ষেত্রে প্রথম বাছুর প্রসবকালে সমস্যা একটু বেশি হয়। তাই বাছুর হওয়ার সাথে সাথে গাভীকে কিছু কুসুম গরম পানি ও তার সাথে ভিটামিন সি সদৃশ্য কিছু খাওয়াতে হবে। এতে করে গাভীর শরীর ঠিক থাকে।
৫. এই সময় মিল্ক ফিভার (দুস্থ জ্বর) যাতে না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম খাবারের সাথে দিতে হবে। বাছুর প্রসবের প্রায় ১ সপ্তাহ আগে ভিটামিন ডি খাওয়ালে গাভীর জন্য সহায়ক হয়।
৬ গাভীকে নিয়মিত পরিষ্কার রাখা : বাছুর প্রসবের পর গাভীকে সঠিকভাবে গোসল করাতে/ পরিষ্কার করতে হবে। শীতের দিন  হলে হালকা গরম পানি দিয়ে হলেও তা পরিষ্কার করতে হবে। যা দেহের বহিঃপরজীবী দূর করতে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। আর তাপমাত্রার সাথে দুধ উৎপাদন এর একটা সম্পর্ক রয়েছে।
৭. বাছুর প্রসবের পর এমনিতেই দেহের দুর্বলতা ভাব প্রকাশ পায়। এই সুযোগ নিয়ে জীবাণু সহজে বংশ বিস্তার ও রোগ ছড়াতে পারে। আর জীবাণু পরজীবীর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ হলো অপরিচ্ছন্নতা। সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।

গরমকালে প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে অন্তত ২ বার গোসল করানো ভালো। শীতকালে তেমন সম্ভব না হলে ব্রাশ দিয়ে শরীরের লোম পরিষ্কার করতে হবে।  এতে করে লোমের অর্থাৎ সারা শরীরে রক্ত প্রবাহ ঠিক থাকে। যা দুধ উৎপাদনে সহায়ক।
৮. গাভীর বাসস্থান পরিচ্ছন্ন রাখা : যে স্থানে গাভীকে রাখা হয় তার উপর গাভীর স্বাস্থ্য ও দুধ অনেকটা নির্ভর করে। ভালো ভ্যান্টিলেশন শুকনো ও স্যাঁতসেঁতে মুক্ত পরিবেশে গাভীকে রাখতে হবে। এতে করে লোমের অর্থাৎ সারা শরীরে রক্ত প্রবাহ ঠিক থাকে। যা দুধ উৎপাদন সহায়ক।
৯. বাচ্চা প্রসবের আগে ও পরে কিছু দিন বাসস্থানকে আগে আরাম দায়ক করতে শুকনো খড় ব্যবহার করা উত্তম।
কোন রকম ময়লা আবর্জনা সেখানে রাখা উচিত নয়। এতে করে পরবর্তীতে কৃমি বৃদ্ধি পেতে পারে। সপ্তাহে অন্তত ২ বার ব্লিচিং পাউডার দ্বারা গাভীর স্থানের মেঝে পরিষ্কার করতে হবে। এতে করে জীবাণুর প্রাদুর্ভাব অনেকাংশে কমানো যায়।
১০. পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাসের সরবরাহ করা : গাভীর দুধ উৎপাদন  বাড়াতে কাঁচা ঘাসের কোনো বিকল্প নেই। সুষম খাদ্যের পাশাপাশি কাঁচা ঘাস দুধ উৎপাদন বাড়ায়। ঘাসের বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতিতে দুধ উৎপাদন বাড়ায়।

কাচা ঘাস
কাচা ঘাস অদিক দুধ উতপাদনে সাহায্য করে

 

১১. নির্দিষ্ট সময়ে দোহন করা : প্রতিদিন একই সময়ে দুধ দোহন করলে এর উৎপাদন ভালো থাকে। গাভীর দেহের হরমোন তখন ভালো কাজ করতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ে একই ব্যক্তি দ্বারা দুধ দোহন করলে দুধ উৎপাদনের মান ভালো থাকে বলে প্রমাণিত হয়েছে। অন্য ব্যক্তি বা পদ্ধতির পরিবর্তন হলে গাভী অনেকটা  বিরক্ত হয়। ফলে দুধ উৎপাদন কমে যায়।আর  উন্নতজাতের গাভী এর ক্ষেত্রে দুই বা তিনবার বেশি দুধ দহন করা যেতে পারে।
১২. নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দোহন শেষ করা : দুধ নিঃসরনের  সাথে  জড়িত হরমোন অক্সিটোসিন মাত্র ৮ মিনিট কাজ করে । এজন্য ওই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ দুধ পেতে দোহন শেষ করতে হবে।
১৩. দুধ দোহনের সংখ্যা : দুধ উৎপাদনের পরিমাণের ওপর দুধ দোহন সংখ্যা নির্ভর করে। সাধারণত সকাল ও বিকালে  দুধ দোহন করা হয়। এতে দুধ উৎপাদন পরিমাণ বাড়ে।
১৪. ব্যায়াম করানো : দীর্ঘদিন পেটে বাছুর/ গর্ভবর্তী থাকায় প্রায় অনেকটা অলস হয়ে থাকে গাভীগুলো। তাই বাছুর হওয়ার পর থেকে গাভীকে একটু ব্যায়াম (হাঁটানো) এর ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে

১৫. বাছুরকে দুধের পাশাপাশি অন্য কিছু দেয়া : গাভীর দুদ্ধ প্রদান কালে বাছুরকে তার মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য কিছু খাওয়াতে হবে। এতে  করে দুধ এর চাহিদা কম হবে। যার ফলে বাছুর প্রয়োজনের অতিরিক্ত দুধ গাভী তার মালিককে প্রদান করবে। এ আলাদা খাদ্যকে বলা হয় কাফ স্টাটার (Calf Startar) যাতে পুষ্টিমান থাকবে ২০% উঈচ ধহফ ৭০% TDN এটা প্রোটিন, মিনারেল ও ভিটামিন ও অ্যান্টিবায়োটিকের  সমন্বয়ে তৈরি করা হয়।
১৬. উপযুক্ত পারিপার্শ্বিক অবস্থা : ঘরের পরিবেশ আরামদায়ক ও সন্তুষ্ট অবস্থায় দুধ দোহন করা উত্তম। এতে দুধ দোহন এর গতি ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। ঘরের পরিবেশ শান্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। উচ্চ শব্দ, কুকুর, আগন্তক অযথা চিৎকার ও অন্যান্য উদ্ভূত পরিস্থিতি অবশ্যই পরিহার করা।  এসব হলে দুধ নিঃসরনে ব্যঘাত ঘটে।
 ১৭. দোহন কালে খাওয়ানো : দৈনিক রেশনের দানাদার কিছু অংশ দোহনের সময় সরবরাহ করলে গাভীর মনোযোগ খাওয়ার দিকে থাকে। এ সময় হরমনের কাজ ভালো হয় ফলে দুধ নিঃসরন পর্যাপ্ত হয়। এ পদ্ধতি বদমেজাজি গাভী দোহনের সহায়ক হয়।
১৮. ভিটামিন ও মিনারেল প্রিমিক্স খাওয়ানো  : বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের মিক্সড পাউডার পাওয়া যায়। যা ভিটামিন, মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করে দুধ উৎপাদন বাড়ায়। ভিটামিন ডি বি’সহ বিভিন্ন নামে বাজারে পাওয়া যায়। যা খাবারের সাথে সরবরাহ করতে হয়।
উপরোক্ত ব্যবস্থা ঠিকমতো গ্রহণ করলে দুধের উৎপাদন অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব। যা দেশের জাতীয় চাহিদা পূরণের একটি পদক্ষেপ বলে গণ্য হবে।

 

আমাদের গাভীগুলো এখানে দেখুন

মো. মোস্তাফিজুর রহমান*

* শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, ভেটেরিনারি অনুষদ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published.