চাকরি ছেড়ে গাভীর খামারের মাধ্যমে সফল রুবেল | GorurHaat | First Online Gorurhaat In Bangladesh

চাকরি ছেড়ে গাভীর খামারের মাধ্যমে সফল রুবেল

খামার করে সফল রুবেল

চাকরি ছেড়ে গরুর খামারে সফল রুবেল চলুন শোনাই তার গল্প

চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে খামারের কাজে ঝুঁকে পড়েছেন সোনাতলার রুবেল (৩০)। তিনি উপজেলার পাকুল্যা ইউনিয়নের আচারেরপাড়া গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে। তাদের আদী বাড়ি ছিল ওই ইউনিয়নের পূর্ব সুজাইতপুর গ্রামে।
যমুনা নদীর ভাঙনে জায়গা-জমির ক্ষতি হওয়ায় তাদের সংসার হয় অস্বচ্ছল। কয়েক বছর আগে সেখান থেকে ছেড়ে ওয়াপদা বাঁধের পশ্চিমে আচারেরপাড়া গ্রামে বাড়িঘর করেন। সংসারের অস্বচ্ছলতা লাঘব করতে রুবেল উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকায় গিয়ে একটি টেক্সটাইল মিলে স্বল্প বেতনে চাকরি শুরু করেন।
স্বল্প বেতনের টাকায় তাদের সংসার চলে কষ্টে। এমতাবস্থায় রুবেল মনে করলেন, হাঁস-মুরগী, গরু পালন ও মাছ চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। এ ব্যবসা ভালভাবে করতে পারলে অধিক মুনাফা হবে। তাই তিনি বগুড়ার সাবগ্রামে হ্যাচারি থেকে সোনালী জাতের কিছু মুরগী সংগ্রহ করে ২০০৭ সালে বাবাকে দিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে একটি মুরগীর খামার শুরু করেন। দু’বছরে খামার থেকে বেশ কয়েক হাজার টাকা মুনাফা হয়। খামার করা লাভ আছে বলে রুবেল ২০০৯ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়ি এসে পুরোদমে খামারের কাজে নিযুক্ত হন। এ খামার থেকে মুনাফা হওয়ায় আরো একটি খামার করেন। দুই খামারে বর্তমানে তার প্রায় আট লাখ টাকা মূল্যের ১,৫০০টি মুরগী রয়েছে। যখন মুরগীগুলো একসাথে ডিম দেয় তখন তার মন আনন্দে ভরে ওঠে। মুরগী ও ডিম বিক্রি করে বেশ লাভবান হতে থাকেন। এরপর গরুর খামারের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি ঘর (খামার) তৈরী করেন। এ খামারের যাত্রা শুরু করেন দু’টি ফ্রিজিয়াম জাতের গাভী দিয়ে। দু’টি গাভীর দুধ বিক্রি করে সেখান থেকে বেশ টাকা মুনাফা হতে থাকে। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে দু’টি বাছুরসহ মোট ৭টি গরু। এর মধ্যে বর্তমানে দুইটি গাভী দৈনিক প্রায় ২০ লিটার দুধ দেয়। প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হয় ৩০-৩৫ টাকা। এতে বাড়তে থাকে আয়।
তিনি আয়ের পরিধি বৃদ্ধি করার জন্য ঋণ নিতে জমির কাগজপত্র নিয়ে একদিন ছুটে গেলেন কর্মসংস্থান ব্যাংকে। ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ নিতে চেয়েছিলেন সে তুলনায় তাদের নদী এলাকার জমির মূল্য কম। এ কারণে ঋণ পেলেন না। বাধ্য হয়ে ঋণ নিলেন এনজিও থেকে। ঋণের টাকায় বাড়ির পাশে অন্যের একটি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। তিন বছর মেয়াদে পুকুরটি লিজ নিয়েছেন আড়াই লাখ টাকায়। সেখানে রুই, কাতলা, মৃগেল প্রভৃতি মাছ চাষ করেছেন। সেখান থেকে প্রতি বছরে প্রায় দেড় লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা যায় বা খাওয়া হয়। গত বন্যায় পুকুর থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মাছ ভেসে গেছে। এতে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যে রুবেল গবাদি পশু, মুরগী ও মাছ চাষের ওপর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এসব কর্মকাণ্ডের ওপর সরকার কিংবা কোনো সংস্থা থেকে অনুদান কিংবা স্বল্প সুদে ঋণ পেলে বৃহত্ পরিসরে খামার করবেন বলে খামারি রুবেল জানান।
তিনি আরো জানান, বৃহত্ পরিসরে খামার করলে একদিকে নিজে স্বাবলম্বী হওয়া যাবে, অন্যদিকে কিছু বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে। সেইসাথে মানুষের মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমের কিছু চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। তিনি জানান, আমি ভাল কাজের মধ্য দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। সেইসাথে সেবা করতে চাই এলাকার মানুষের। রুবেল আক্ষেপ করে বলেছেন, ইতিপূর্বে এসব খামার থেকে মুনাফা হলেও এবার শীতের শুরু থেকে মাছ ও মুরগীর দাম কমে গেছে। কমেছে গ্রাহক। বেড়েছে গবাদি পশু,মুরগী ও মাছের খাদ্যের দাম। তাই খামারীদের পরিস্থিতি এখন ভাল নয়। দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটছে। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস থেকেও সহযোগিতা পাচ্ছি না। অন্যান্য খামারীদেরও প্রায় একই দশা। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রুহুল আমিন জানান এ উপজেলায় ১৩৯টি গরুর খামার ও ১১৪টি মুরগীর খামার রয়েছে। বর্তমানে গবাদি পশু-পাখির খাদ্যের দাম বেশি। এ কারণে খামারীদের আশানুরুপ লাভ হচ্ছে না। তিনি বলেন এ সময়ে গবাদি পশু কিংবা হাঁস-মুরগীর রোগ-ব্যধি নেই বললেই চলে। যদি কখনো দেখা দেয় সেজন্য আমরা রোগ প্রতিরোধের কাজে সর্বদা তত্পর রয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *